ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১১ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২

adbilive
adbilive
পাকিস্তান সফর নিয়ে চলছে আলোচনা

পাকিস্তান সফর নিয়ে চলছে আলোচনা

যুদ্ধাবস্থায় পরমাণু শক্তিধর দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তান। ইতোমধ্যে দেশ দুটির ঘরোয়া টুর্নামেন্ট আইপিএল ও পিএসএল অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হয়ে গেছে। পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী টি২০ সিরিজ খেলতে আগামী সপ্তাহে সংযুক্ত আরব আমিরাত হয়ে পাকিস্তানে যাওয়ার কথা বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের। পাকিস্তানে যেহেতু পিএসএল বন্ধ হয়ে গেছে তাই এই সিরিজটাও যে আপাতত হচ্ছে না সেটি নিশ্চিত। তবে শনিবার হোম অব ক্রিকেট মিরপুরে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কার্যালয়ে বোর্ড প্রেসিডেন্ট ও পরিচালকদের সভা শেষে এক বার্তায় জনানো হয়েছে, সফরটি এখনই বাতিল হচ্ছে না। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) এখনো সিরিজ আয়োজনে আশাবাদী। নতুন সিডিউলে সেটি তৃতীয় কোনো দেশেও সরে যেতে পারে। তবে টাইগারদের আসন্ন আমিরাত সফর হবে বলে জানানো হয়েছে। দেশটির বোর্ড কর্তাদের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা চলছে বিসিবির। পূর্বের সিডিউল অনুযায়ী ১৪ মে ঢাকা থেকে আমিরাতের উদ্দেশ্যে রওনা দেবে বাংলাদেশ। শারজায় স্বাগতিকদের সঙ্গে দুই টি২০ ১৭ ও ১৯ মে।  সিরিজ খেলে সেখান থেকেই লিটন-মেহেদিদের পাকিস্তানে যাওয়ার কথা; ২৫ মে থেকে ৩ জুন পর্যন্ত লাহোর ও ফয়সালাবাদে পাঁচ ম্যাচের টি২০ সিরিজ। কিন্তু বর্তমান যুদ্ধাবস্থায় বিসিবি পাকিস্তানে দল পাঠাবে কি না, সেই প্রশ্নটাই বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। এ নিয়েই বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ ও পরিচালকরা জরুরি সভায় বসেন। সেখানে এখনই সফর স্থগিত করার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বিসিবি চাইছে আরও কয়েক দিন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে। প্রতিবেশী দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তানের সংঘাতের আঁচ ভালোভাবেই টের পাচ্ছে ক্রিকেট। এরই মধ্যে স্থগিত হয়ে গেছে আইপিএল ও পিএসএলের খেলা। উদ্ভূত এই পরিস্থিতিতে আগামী আগস্ট-সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ সফর ও সেপ্টেম্বরে নিজেদের মাঠে এশিয়া কাপ আয়োজন করবে না ভারত, জানিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া। নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাত দিয়ে তারা লিখেছে, আন্তর্জাতিক সূচি বাতিল করে প্রয়োজন পড়লে ইন্ডিয়ান বোর্ড (বিসিসিআই) ওই সময়ে আইপিএলের বাকি অংশ আয়োজন করতে পারে। ফলে ভারতের বাংলাদেশ সফর নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। একই সঙ্গে বাতিল হতে পারে এই বছরের এশিয়া কাপও। জুনের প্রথম সপ্তাহে পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে ইংল্যান্ড যাওয়ার কথা ভারতের। এক সপ্তাহ পর ফের শুরু হলে ইংল্যান্ড সফরের আগেই অবশ্য শেষ হয়ে যাবে আইপিএল। কিন্তু সীমান্তে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার কারণে কোনো কিছুরই আপাতত নিশ্চয়তা নেই। আগস্টের আগে আইপিএল শেষ হলেও বাংলাদেশ সফর ও এশিয়া কাপ খেলতে চায় না বিসিসিআই। ভারতের আগস্টের বাংলাদেশ সফরের পূর্ণাঙ্গ সূচি গত মাসে ঘোষণা করেছিল বিসিবি। তিন ওয়ানডে ও তিন টি২০ খেলতে ১৩ আগস্ট ঢাকায় আসার কথা ভারতীয় দলের। সূচি অনুযায়ী প্রথম ওয়ানডে ১৭ আগস্ট মিরপুরে, পরেরটি একই ভেন্যুতে ২০ আগস্ট। দুই দল এরপর চলে যাবে চট্টগ্রামে। বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ফ্লা. লে. মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচ ২৩ আগস্ট। এরপর টি২০ সিরিজের প্রথম ম্যাচও চট্টগ্রামে, ২৬ আগস্ট। পরের দুই ম্যাচ আবার মিরপুরে ২৯ ও ৩১ আগস্ট। তবে সবই এখন অনিশ্চিত।

সময়ের সীমানা পেরিয়ে চিরন্তন হয়ে ওঠার উচ্চারণ ‘ছিন্নপত্র’

সময়ের সীমানা পেরিয়ে চিরন্তন হয়ে ওঠার উচ্চারণ ‘ছিন্নপত্র’

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের  জন্মজয়ন্তী  উপলক্ষে শনিবার  সন্ধ্যায় ধানমন্ডির ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তনে  অনুষ্ঠিত হলো ‘পদ্মাপারে রবীন্দ্রনাথ’ শীর্ষক অনুষ্ঠান।  টেগোর   সোসাইটি ঢাকা আয়োজিত অনুষ্ঠানটি ছিল দুই পর্বে বিভক্ত। প্রথম পর্বে ছিল ‘ছিন্নপত্র’ শিরোনামে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী।  দ্বিতীয় পর্বে ছিল ছিন্নপত্র থেকে চিঠি পাঠ ও গান পরিবেশনা। এতে অংশ নেন ইফফাত আরা দেওয়ান, আজিজুর রহমান তুহিন, তানজীনা তমা, ভাস্বর বন্দোপাধ্যায় ও মাহিনুর মুমু। অনুষ্ঠানের শুরুতেই দেখানো হয়  প্রখ্যাত রবীন্দ্র গবেষক ও রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী  ড. চঞ্চল খান পরিচালিত ‘ছিন্নপত্র : পদ্মাপারে রবীন্দ্রনাথ’ শীর্ষক প্রামাণ্যচিত্র। ‘ছিন্নপত্র’ রবীন্দ্রনাথের লেখা চিঠিগুলোর একটি সংকলন যা বাংলা সাহিত্যে গদ্য চিঠিকে কাব্যিক ও  দার্শনিক উচ্চতায় উন্নীত করে। এই চিঠিগুলো কেবল পাঠযোগ্য সাহিত্য নয় বরং পাঠকের আত্মোপলব্ধির পথেও সহায়ক এক প্রামাণ্য দলিল।  সেই প্রামাণ্য দলিলসমূহ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে প্রামাণ্যচিত্রে। ‘ছিন্নপত্র’ মূলত ১৮৯৩ থেকে ১৯০০ সালের মধ্যে লেখা ২৫৪টি চিঠির সংকলন। এই চিঠিগুলো রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন তার প্রিয় ভাইঝি ইন্দিরা দেবী চৌধুরাণীকে, যিনি ছিলেন ব্রাহ্মসমাজের শিক্ষিত ও সংস্কৃতিমনা নারী এবং কবিগুরুর কাছের একজন। ইন্দিরা দেবী তখন সাঁওতাল পরগণার গিরিডিতে অবস্থান করতেন এবং রবীন্দ্রনাথ ছিলেন শিলাইহে পদ্মাপারে তার জমিদারির তত্ত্বাবধানে নিযুক্ত। এই চিঠিগুলো প্রথাগত খবরাখবরের চিঠি নয়। এগুলো আত্মপ্রকাশ, দর্শন, কবিতার মতো শব্দপ্রবাহ, যেখানে পাঠক রবীন্দ্রনাথের হৃদয়ের উন্মোচন দেখতে পান।  ছিন্নপত্রে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর  সব মিলিয়ে ২৫৪টিরও  বেশি চিঠি লিখেছেন, যার অধিকাংশই  লেখা হয়েছে ১৮৯৩ থেকে ১৯০০ সালের মধ্যে। যদিও প্রথম প্রকাশিত সংকলনে প্রায় ৮৭টি চিঠি ছিল, পরবর্তীতে বহু অপ্রকাশিত চিঠি রবীন্দ্র রচনাবলি, ছিন্নপত্রাবলি, ও অন্যান্য চিঠিপত্র সংকলনের মাধ্যমে আলোয় আসে। রবীন্দ্রনাথ ছিন্নপত্রের বেশিরভাগ চিঠি লিখেছেন শিলাইহে বসেÑএক নির্জন, শান্ত, নদীবেষ্টিত গ্রামীণ জনপদে। এই পরিবেশ তার আত্মবিশ্লেষণের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। ছিন্নপত্রে তিনি ঈশ্বরচিন্তাকে  কোনো প্রথাগত ধর্মীয় কাঠামোতে বন্ধ করেননি বরং তিনি অনুভব করেন, আত্মা ও বিশ্বচেতনা একে অপরের প্রতিরূপ।  এটি চিঠিকে নিতান্ত ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি থেকে সাহিত্যিক শিল্পে পরিণত করেছে।  ‘ছিন্নপত্র’ বাংলা সাহিত্যে কেবল একটি গ্রন্থ নয়, এটি একজন মানুষের আত্মা, নিঃসঙ্গতা, প্রকৃতি ও ঈশ্বরের সঙ্গে চলমান সংলাপের দলিল।   ‘ছিন্নপত্র’ যেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মনোজগতের নিঃশব্দ উচ্চারণ।  ‘ছিন্নপত্র’ তাই সময়ের সীমানা পেরিয়ে চিরন্তন হয়ে ওঠা আত্মার উচ্চারণ। বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে শিল্পকলায় সাংস্কৃতিক উৎসব ॥ আজ রবিবার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র উৎসব বুদ্ধ পূর্ণিমা বা বৈশাখী পূর্ণিমা। আর মহামতি গৌতম বুদ্ধর ত্রিস্মৃতিময় দিবসটি উপলক্ষে শনিবার রঙিন রূপ পেল সেগুন বাগিচার একাডেমির নন্দন মঞ্চ। সন্ধ্যা  পেরিয়ে অবধি অনুষ্ঠিত হয়েছে বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। সেই সুবাদে কণ্ঠশিল্পীর গাওয়া গানের সুরে সিক্ত হয়েছে শ্রোতার অন্তর। নৃত্যশিল্পীর পরিবেশিত নাচের নান্দনিকতায় মুগ্ধ হয়েছে দর্শক নয়ন। সঙ্গে ছিল শ্রোাতার হৃদয়ে আলোড়ন তোলা বৈচিত্র্যময় ব্যন্ড সংগীতের পরিবেশনা।  আর রাজধানী ঢাকার সমান্তরালে  এদিন থেকে ছয় জেলায় অনুষ্ঠিত হয়েছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত সংস্কৃতি উৎসব। সাংস্কৃতিক পর্বের শুরুতেই পরমেশ বড়ুয়ার পরিচালনায় মানবতাবাদী সমবেত সংগীত পরিবেশন করেন ধর্মরাজিক ললিতকলা একাডেমির বাসাবো ও সবুজবাগের শিল্পীবৃন্দ। অন্তর  দেওয়ানের পরিচালনায় সমবেত নৃত্য পরিবেশন করে বৌদ্ধ শিল্পীবৃন্দ। নাচের পালা শেষে পুনরায় গান নিয়ে  সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী সায়ন। সবশেষে সংগীত পরিবেশন করেন  ডিফারেন্ট টাচ ব্যান্ড। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, শিক্ষা উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার।

বিমা খাতে অনিয়ম চলছেই, ১৪ বছরেও ফেরেনি শৃঙ্খলা

বিমা খাতে অনিয়ম চলছেই, ১৪ বছরেও ফেরেনি শৃঙ্খলা

সময়মতো দাবি পরিশোধ না করা, বছরের পর বছর ভারপ্রাপ্ত সিইও দিয়ে কার্যক্রম চালানো, গ্রাহক প্রিমিয়ামের টাকা আত্মসাৎসহ বিমা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে আইন ভঙ্গের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এসব অনিয়ম দূর করে শৃঙ্খলা ফেরাতে ২০১০ সালে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠার ১৪ বছর পরও বিমা খাতের শৃঙ্খলা ফেরেনি। এমনকি ৫ আগস্টের পর বিমা খাতে সংস্কারের যে আশা করা হয়েছিল, তাও যেন গুড়েবালি। এক্ষেত্রে শুধু নিয়ন্ত্রক সংস্থার দুর্বলতাই নয়, খাত সংশ্লিষ্টদেরও মানসিকতা পরিবর্তনের অভাব আছে বলে মনে করছেন বিমা বিশ্লেষকরা। জানা গেছে, ফারইস্ট, হোমল্যান্ড, প্রগ্রেসিভ, পদ্মা, গোল্ডেন, বায়রাসহ জীবন বিমা খাতের দুই ডজনেরও বেশি প্রতিষ্ঠানে বছরের পর বছর দাবির টাকা আদায়ে ঘুরছে কয়েক লাখ গ্রাহক। আইডিআরএর ২০২৩-২৪ অর্থবছরের খসড়া বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৩ সাল পর্যন্ত জীবন বিমায় ৩৬টি প্রতিষ্ঠানের কাছে ২৭ লক্ষাধিক গ্রাহকের পাওনা ১২ হাজার ৫১ কোটি টাকা। এর মধ্যে পরিশোধ হয়েছে ৮ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা। অপরদিকে ২০২৪ সালে মোট উত্থাপিত দাবির পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ৯৬৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা, যার মধ্যে মাত্র ৮ হাজার ৫৯০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, মেয়াদপূর্তির ৬-১০ বছর পরও বিমা দাবির টাকা পায়নি, এমন গ্রাহকের সংখ্যাও লাখের উপরে। এমনই একজন বিমা গ্রাহক চাঁদপুরের উত্তর মতলব থানাধীন পাঁচআনি গ্রামের শাহিনা আক্তার। ২০০৮ সালে সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে ১০ বছর মেয়াদি একটি বিমা করেন। ২০১৮ সালে মেয়াদপূর্তি হলেও গত ৬ বছর ধরে দাবির একটি টাকাও তুলতে পারেনি। ভাড়া বাড়িতে থাকা শাহিনা আক্তারের স্বপ্ন ছিল বিমার টাকা তুলে একটি ঘর বানাবেন। প্রতি মাসে ভাড়া বাবদ সঞ্চিত টাকায় উপার্জনে একটি স্থায়ী উপায় বের করবেন। কিন্তু চাঁদপুর থেকে ঢাকা আসা-যাওয়ায় জুতার তলা ক্ষয়ে তার সেই স্বপ্ন অধরাই থেকে গেছে। টাকা আদায়ে সানলাইফের প্রধান কার্যালয়ে আসা-যাওয়া করতে গিয়ে উপরন্তু ঋণগ্রস্ত হয়েছেন। বিমা করাই যেন ‘অভিশাপ’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার মিথ্যা তথ্য দিয়ে গ্রাহকের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনাও কম নয়। ২০২৩ সালে যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চট্টগ্রাম শাখায় ৯৩ জন গ্রাহককে মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রায় ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ আছে তৎকালীন মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার কামরুল হাসানের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীরা আইডিআরএর কাছে একাধিকবার অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পায়নি। শেষ পর্যন্ত টাকা আদায়ে কোর্টের কাছে বিচার প্রার্থণা করে ভুক্তভোগীরা। সাম্প্রতিক সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বিরুদ্ধেও গ্রাহকের ৩৫৩ কোটি টাকা তছরুপের প্রমাণ পেয়েছে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। এর আগে আইডিআরএর অনুসন্ধানেও ১৮৭ কোটি টাকা তছরুপের প্রমাণ পেয়েছে বলে জানা গেছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটিতে এখন পর্যন্ত গ্রাহকের বিমা দাবির টাকা বকেয়া নেই, কিন্তু খাত সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা গ্রাহক প্রিমিয়ামের তছরুপ করা এই অর্থ ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠানটির জন্য বড় সমস্যা হয়ে দেখা দেবে। বিমাবিদদের মতে, ১০ টাকার প্রিমিয়ামের বিপরীতে গ্রাহককে ১০০ টাকার বিমা কভারেজ দিতে হয়। তা ছাড়া গ্রাহককে শুধু প্রিমিয়ামের অর্থই নয়, সঙ্গে মুনাফাও (বোনাস) দিতে হয়। ফলে গ্রাহক প্রিমিয়ামের ৩৫৩ কোটি টাকার বিপরীতে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার কভারেজ দিতে হবে। এর সঙ্গে বোনাস হিসেবে আরো কয়েকশ’ কোটি টাকা যুক্ত হয়ে এই দায় ৪ হাজার কোটি টাকা ছাড়াবে বলে ধারণা খাত সংশ্লিষ্টদের। এ ঘটনায় পরবর্তীতে পরিচালনা পর্ষদ সাসপেন্ড করে সেখানে প্রশাসক নিয়োগ দেয় আইডিআরএ। কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যেই প্রশাসক তুলে নিতে স্বয়ং অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশ জারি হয়। এদিকে আইনে ৬ মাসের বেশি মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) পদ খালি না রাখার বিধান থাকলেও ৪ বছর ধরে সেই আইন লঙ্ঘন করছে গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স। ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে প্রতিষ্ঠানটির সিইও পদ শূন্য রয়েছে। এখানে সর্বশেষ সিইওর দায়িত্বে ছিলেন এম এম মনিরুল আলম। ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর তার চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ রাকিবুল করিমকে সিইওর চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু চলতি দায়িত্ব পেলেও সিইওর পূর্ণ দায়িত্ব পেতে যোগ্যতার শর্তে ঘাটতি রয়েছে এই কর্মকর্তার। ফলে হতে পারছেন না পূর্ণাঙ্গ সিইও। এর পরও গত ৪ বছরে নিয়মিত সিইও নিয়োগে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি গার্ডিয়ানের পরিচালনা পর্ষদ। এই অনিয়মে গত ২৭ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠানটিকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করে আইডিআরএ। একই সঙ্গে পরবর্তী ৬০ দিনের মধ্যে সিইও নিয়োগে ব্যর্থ হলে ফের ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে বলে সতর্ক করে। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার এই পদক্ষেপকে অপকৌশল বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। চতুর্থ প্রজন্মের এক জীবন বীমা কোম্পানির সিইও বলেন, ৪ বছরের অধিক সময়ে সিইও নিয়োগ না দেওয়া আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। যেখানে নিয়মিত সিইও ৬ মাস না থাকলেই আইডিআরএ প্রশাসক নিয়োগ দেওয়াসহ লাইসেন্স বাতিল করতে পারে, সেখানে তেমন কোনো পদক্ষেপই নেওয়া হয়নি। এ ধরনের কর্মকা- নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতি আস্থাহীনতা তৈরি করতে পারে। এ বিষয়ে গার্ডিয়ান লাইফের সিইও শেখ রাকিবুল করিমের কাছে জানতে চাইলে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, আইডিআরএ আমাদের যে জরিমানা করেছে সে বিষয়ে আমাদের পরিচালনা পর্ষদ একটি রিভিউ আবেদন করেছে। তাই রিভিউয়ের সিদ্ধান্ত না হলে কিছু বলতে পারছি না। আর পরিচালনা পর্ষদ কেন ৪ বছর ধরে সিইও নিয়োগ দেয়নি, এটা তারাই ভালো বলতে পারবে। শুধু গার্ডিয়ান লাইফ নয়, দীর্ঘদিন যাবত  সিইও নেই এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আরও রয়েছেÑ  সোনালি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, আকিজ তাকাফুল লাইফ, মার্কেন্টাইল ইসলামি লাইফ, যমুনা লাইফ, সান লাইফ, হোমল্যান্ড লাইফ, বায়রা লাইফ, কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স ও রুপালি ইন্স্যুরেন্স। এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে এখনো কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে পারেনি নিয়ন্ত্রক সংস্থা।  উল্লেখ্য, সোনালি লাইফ ইন্স্যুরেন্স এবং রুপালি ইন্স্যুরেন্সের পরিচালনা পর্ষদ একই পরিবারভুক্ত সদস্যদের নিয়ে গঠিত। এ ছাড়া উভয় প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ শেয়ারও ওই পরিবারটির হাতে, যা সুস্পষ্ট আইন লঙ্ঘন। তবে বিমা খাতে নানা অনিয়ম থাকলেও সার্বিকভাবে দুটি বিষয়কে প্রধান সমস্যা বলে মনে করেন প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জালালুল আজিম। গ্রাহকের অর্থ সময়মতো প্রদান না করা এবং কোম্পানির সংখ্যা অনুপাতে দক্ষ জনবল সংকট। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, কোনো কোম্পানি যেন ভবিষ্যতে সমস্যায় না পড়ে এ জন্য পূর্ব থেকেই তার ব্যবস্থাপনা ব্যয় কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। একই সঙ্গে বিমাকে সম্পূর্ণ ডিজিটাইজেশন ও মাঠ কর্মীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দরকার। অনিয়মের কারণে আইডিআরএ কর্তৃক প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা আরোপের বিরোধিতা করে জালালুর আজিম বলেন, কোনো কোম্পানিকে জরিমানা করা হলে সে তো গ্রাহকের প্রিমিয়ামের টাকা থেকেই জরিমানা দেবে। তাই অনিয়ম হলে ব্যক্তিগতভাবে জরিমানা করা উচিত।   এদিকে বিমায় অনিয়ম বন্ধে আইডিআরএর ব্যর্থতার নিয়ে বিমাবিদ ড. কাজী মুরতুজা আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, এই ব্যর্থতার প্রধান কারণ দুটি। আমাদের পরিবর্তন করার আগ্রহ নেই এবং যোগ্যতাও নেই। এটি এককভাবে কারো দায় নয়, বরং ব্যক্তির পাশাপাশি পরিচালনা পর্ষদ, নিয়ন্ত্রক সংস্থা, মন্ত্রণালয় এবং গ্রাহকরাও জড়িত। অনেক সময় জরিমানা দিয়েও তারা আইন মানছে না। সেক্ষেত্রে নামমাত্র জরিমানাটাও একটা কারণ। তাই মানসিকতা পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত বীমা খাতে পরিবর্তন সম্ভব নয়। একই কথা বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের চেয়ারম্যান ড. হাসিনা শেখ। তার মতে, বীমা খাতে অনিয়ম দূর করতে না পারার প্রধান কারণ মানসিকতা। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, বিমা খাতে অবশ্যই কিছু ভালো কোম্পানি আছে, তবে বেশিরভাগেরই ইনটেনশন ভালো না। তারা গ্রাহকের প্রিমিয়ামের টাকাকে দায় মনে না করে ইনকাম মনে করে, মেরে দেওয়ার চেষ্টা করে, পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। মানুষের ক্লেইমের পাওনা টাকা দিতে চায় না, হয়রানি করে। এদের ইথিক্যাল এবং মোর‌্যাল ডেভেলপমেন্টের দরকার আছে। একইসঙ্গে আইডিআরএকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো তাকেও স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। কিন্তু প্রায় দেড় দশকেও বীমা খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় নিজেদের ব্যর্থতা মানতে নারাজ আইডিআরএ। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সোলায়মান এ বিষয়ে জনকণ্ঠকে বলেন, অতীতে কি হয়েছে সেটা বলতে পারবো না। তবে বর্তমান কর্তৃপক্ষ আসার পর এসব অনিয়ম তদন্ত করে বের করেছেন। এর পরই মূলত কোম্পানিগুলোর বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তা ছাড়া বিমা কোম্পানিগুলোকে নিয়মের মধ্যে আনতে প্রতিদিনই কর্তৃপক্ষ থেকে বিভিন্ন বিমা কোম্পানির চেয়ারম্যান, পরিচালনা পর্ষদ ও সিইওর সঙ্গে বৈঠক করা হচ্ছে। যাদের বিমা দাবি বকেয়া আছে, প্রয়োজনে তাদের সম্পদ বিক্রি করে দাবি পরিশোধের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। লোকবল সংকট নিয়ে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে যেখানে প্রায় ৭-৮ হাজার কর্মী কাজ করে, সেখানে ৮২টি বিমা কোম্পানির কয়েক হাজার শাখা মনিটরিং ও সুপারভাইজিংয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সর্বোচ্চ থেকে সর্বনি¤œ পদ পর্যন্ত একশ’ জনেরও কম আছে। তার পরও কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা আইডিআরএর নজরে আসলে সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

সংস্কারের ছোঁয়া লাগেনি শেয়ারবাজারে অনিশ্চয়তা বাড়ছেই

সংস্কারের ছোঁয়া লাগেনি শেয়ারবাজারে অনিশ্চয়তা বাড়ছেই

দেশের শেয়ারবাজারে হতাশা বাড়ছেই। দিন যত যাচ্ছে হতাশার জালে আরও বেশি বন্দি হয়ে পড়ছে বিনিয়োগকারীরা। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সংস্কারের ছোঁয়া সবখানে লাগলেও শেয়ারবাজার যেন আরও বেশি ডুবছে অনিশ্চয়তার জালে। পরিস্থিতির উন্নয়নে স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টা আগামীকাল বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন শেয়ারবাজার অংশীজনদের সঙ্গে। ফলে সরকারি ছুটি শেষ হওয়ার আগে নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যানকে ফিরতে হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। বিগত সরকারের পতনের পর অন্য প্রতিষ্ঠানে পরির্বতন এসেছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। নতুন নেতৃত্বের অধীনে শেয়ারবাজারে সার্বিক সূচক কমেছে ১ হাজার ২ পয়েন্ট। বাংলাদেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান যেখানে নতুনভাবে শুরু করার পর আশার সঞ্চার করেছে সেখানে শেয়ারবাজারে ঘটেছে উল্টোটা। প্রতিনিয়ত দরপতনের কারণে আস্থা ফেরেনি বিনিয়োগকারীদের মাঝে। বরং আরও অনাস্থা ক্রমশ বাড়ছে। এতে করে বাজার পতন হচ্ছে নিয়মিত। প্রতিদিন রাস্তায় নামতে হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের। গত ১৮ আগস্ট কমিশনের পরিবর্তনের পর দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূল্যসূচক কমেছে ১০০২ পয়েন্ট। এ সময় বিনিয়োগকারীরা হারিয়েছে প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার পুঁজি। সাধারণ বিনিয়োগকারী ও বাজার অংশীজনরা শেয়ারবাজারে টানা পতনের জন্য বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশনের অযোগ্যতা ও শেয়ারবাজার নিয়ে জ্ঞান শূন্যতাকে দায়ী করে আসছেন। শুধুমাত্র বিনিয়োগকারীই নন শেয়ারবাজারের সব শ্রেণির মানুষ। এমনকি বিএসইসির সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও তার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং এই কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন। অন্যদিকে তার অপসারণের দাবিতে নিয়মিত রাজপথে বিক্ষোভ করে আসছে বিনিয়োগকারীরা। বিনিয়োগকারীদের এখন মূল দাবি হচ্ছে বর্তমান চেয়ারম্যান রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগ। যার পদত্যাগেই শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়াবে বলে বিশ্বাস বিনিয়োগকারীদের। সম্প্রতি একাধিক বিক্ষোভে অংশ নিয়ে বিনিয়োগকারীরা বলেন, মাকসুদ শেয়ারবাজার বোঝেন না। এটা শুধু সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কথা নয়। এই কথা এখন বিএসইসির সাবেক স্বনামধন্য চেয়ারম্যানসহ স্টেকহোল্ডারদের। তাই মাকসুদের অপসারণ হওয়া উচিত। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ১০ আগস্ট বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম পদত্যাগ করেন। এর ২ দিন পর ১২ আগস্ট পদত্যাগ করেন কমিশনার অধ্যাপক ড. শামসুদ্দিন আহমেদ ও ড. রুমানা ইসলাম। এরপর গত ১৮ আগস্ট খন্দকার রাশেদ মাকসুদকে চেয়ারম্যান এবং ২৮ আগস্ট মো. আলী আকবর ও ৩ সেপ্টেম্বর ফারজানা লালারুখকে বিএসইসির কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে শেয়ারবাজার ভালো হবে প্রত্যাশা করা হলেও তা হয়নি। উল্টো নতুন কমিশনের নিয়োগের দিন থেকে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ডিএসইর ডিএসইএক্স কমেছে ১০০২ পয়েন্ট। অথচ আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরে ও মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন পুনর্গঠনের আগে শেয়ারবাজার অনেক ভালো হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিল। ৫ আগস্ট থেকে ১৭ আগস্ট পর্যন্ত মূল্যসূচক বেড়েছিল ৬৭৫ পয়েন্ট। যেটি আর পরে টিকে থাকেনি। উল্টো বড় ও প্রাতিষ্ঠানিক সব ধরনের বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজার থেকে বের হয়ে যেতে শুরু করেন। অংশীজনেরা বলছেন, বিএসইসির নতুন নেতৃত্ব শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারী ও অংশীজনদের আশা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। সেই সঙ্গে বাজারের দিকে না তাকিয়ে তিনি শুধুমাত্র জরিমানা, বিও হিসাব বন্ধ রাখা, মিউচুয়াল ফান্ডের অ্যাকাউন্ট বন্ধসহ একাধিক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যা শেয়ারবাজারকে আরও ধ্বংসের দিকে নিয়ে গেছে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বাজারের মূল সমস্যা বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট। দীর্ঘদিন থেকে এই সংকট চলে আসছে। এর সঙ্গে অর্থনৈতিক বিভিন্ন সংকট, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি এবং জাতীয় রাজনীতিসহ সবকিছু যোগ হয়েছে। ফলে সবার আগে আস্থার সংকট দূর করতে পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অর্থাৎ, বিনিয়োগকারীদের এই নিশ্চয়তা দিতে হবে কারসাজির মাধ্যমে কেউ তার টাকা হাতিয়ে নিলে বিচার হবে। পাশাপাশি ভালো শেয়ারের সরবরাহ বাড়াতে হবে। তবে কাজটি খুব সহজ নয়। এ বিষয়ে ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, আমরা (ব্রোকার) শেষ হয়ে গেছি। টানা লোকসানে অস্তিত্ব না থাকার মতো অবস্থা। এরই মধ্যে অনেক ব্রোকার হাউসে কর্মী ছাঁটাই করতে হয়েছে। তবে সব কর্মী ছাঁটাই করেও টিকে থাকা যাবে না, যদি বিদ্যমান মন্দা চলতে থাকে। খন্দকার মাকসুদকে বিএসইসিতে নিয়োগের দিন গত বছরের ১৮ আগস্ট লেনদেনের শুরুতে ডিএসইএক্স সূচকটি ছিল ৫৯০৪ পয়েন্ট। যে সূচকটি সর্বশেষ বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে ১০০২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৪৯০২ পয়েন্টে। অর্থাৎ নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পরে সূচকটি কমেছে ১০০২ পয়েন্ট বা ১৬.৯৭ শতাংশ। রাশেদ মাকসুদ বিএসইসিতে নিয়োগের দিন বাজার মূলধন বা সব সিকিউরিটিজের দাম ছিল ৭ লাখ ৮ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা। যা ৮ মে নেমে এসেছে ৬ লাখ ৫২ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকায়। এই সরল হিসেবে বিনিয়োগকারীদের সিকিউরিটিজের দাম কমেছে ৫৬ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বিনিয়োগকারীরা হারিয়েছে আরও অনেক বেশি। মাকসুদ কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর ১৫টি ট্রেজারি বন্ড শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে লেনদেন শুরু করেছে। যেগুলোর দর বাজার মূলধনে যোগ হয়েছে। এখন ওইসব ট্রেজারি বন্ড যদি বাজার মূলধন থেকে বাদ দেওয়া হয়, তাহলে বিনিয়োগকারীরা হারিয়েছে অনেক বেশি। ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, মাকসুদ কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর ১৫টি ট্রেজারি বন্ডের লেনদেন শুরু হয়েছে। যেগুলোর বাজার মূলধন বা সিকিউরিটিজের দাম আছে ৫৬ হাজার ৪২২ কোটি টাকা। এসব দর মাকসুদ কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পরে বাজার মূলধনে নতুন করে যোগ হয়েছে। এগুলো বাদ দিলে মাকসুদের নিয়োগের পরে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি কমেছে ১ লাখ ১০ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা। বৈঠকে অংশ নিতে দেশে ফিরছেন বিএসইসি চেয়ারম্যান ॥ বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ প্রশিক্ষণের জন্য বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন। তবে প্রশিক্ষণের মধ্যেই তাকে দেশে ফিরিয়ে আনছে অন্তর্বর্তী সরকার। দেশের শেয়ারবাজারের মন্দাবস্থায় আগামি ১১ মে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বৈঠকে তাকে উপস্থিত থাকার জন্য ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। আগামীকাল রবিবার ‘পুঁজিবাজার উন্নয়ন ও শক্তিশালীকরণ’ এর জন্য প্রধান উপদেষ্টা বৈঠক করবেন। এতে অর্থ উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ও বিএসইসির চেয়ারম্যানকে নিয়ে বৈঠক করবেন তিনি। প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনাতে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এক মার্চেন্ট ব্যাংকের সিইও বলেন, এ যাবতকাল বিএসইসির কর্মকর্তারা প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেছে। সেক্ষেত্রে সহকারী পরিচালক, পরিচালকরা অংশ নেয়। এতে নির্বাহী পরিচালকদের নেওয়া হয় না। যদি নির্বাহী পরিচালকদের ট্রেনিং নিতে হয়, তাহলে তারা দীর্ঘ কর্মজীবনে কি শিখেছে, এটা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। সেখানে বিএসইসির চেয়ারম্যানের ট্রেনিংয়ে অংশগ্রহণ করা তো অকল্পনীয়। এটা পৃথিবীর কোনো দেশের এসইসির ক্ষেত্রে হয়েছে কি না, তা জানা নেই। তবে বাংলাদেশের বিএসইসির কোনো চেয়ারম্যানের এমন ট্রেনিং নিতে দেখা যায়নি। এক শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউসের সিইও বলেন, রাশেদ মাকসুদের ট্রেনিংয়ের দরকার আছে। যেহেতু উনার শেয়ারবাজার নিয়ে জ্ঞানের অনেক ঘাটতি রয়েছে।

নীতির ধারাবাহিকতা থাকলে মূল্যস্ফীতি কমানো সম্ভব ॥ গভর্নর

নীতির ধারাবাহিকতা থাকলে মূল্যস্ফীতি কমানো সম্ভব ॥ গভর্নর

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতির ধারাবাহিকতা ও সরকারি প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলে দেশে মূল্যস্ফীতি ৪ থেকে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব। বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে নারী উদ্যোক্তাদের সমাবেশ, পণ্য প্রদর্শনী ও মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস বিভাগ। গভর্নর বলেন, ‘আমরা যদি একদিকে টাকা ছাপি আর অন্যদিকে বলি মূল্যস্ফীতি কমছে নাÑ তা হলে তো হবে না। আমাদের কঠোর অবস্থানে থাকতে হবে। মূল্যস্ফীতি কমছে, তবে সময় লাগছে। ধীরে ধীরে এটি আরও কমে আসবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এক সময় দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল সাড়ে ১৪ শতাংশ, এখন তা নেমে এসেছে সাড়ে ৮ শতাংশে। খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ছিল সাড়ে ১২ শতাংশের বেশি, এখন তা প্রায় ৯ শতাংশ। আমরা আশাবাদী সঠিক নীতির মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি আরও কমানো সম্ভব।’ নারীদের অগ্রগতির প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, ‘নারীদের সাংবিধানিক অধিকার বাস্তবে পুরোপুরি নিশ্চিত হয়নি। ঋণ নিতে গিয়ে তারা এখনো নানা প্রতিবন্ধকতায় পড়েন। নারীদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের মা-বোনদের অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়া হতো, এখন তা সময়োপযোগী নয়। নারীদের রান্নাঘর থেকে বের করে অর্থনৈতিক কর্মকা-ে যুক্ত করতে মানসিকতার বড় পরিবর্তন প্রয়োজন। বর্তমানে ব্যাংক খাতে মোট ঋণের মাত্র ৬ শতাংশ নারীদের হাতে যাচ্ছে, এটি যথেষ্ট নয়।’ নারীদের ঋণ প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, ‘ঋণ দিতে হবে ব্যাংকগুলোর নিজস্ব তহবিল থেকে। শুধু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফান্ড বাড়িয়ে নয়, বরং নারীদের অধিকার বিবেচনায় নিয়েই উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি, তাদের আর্থিক সচেতনতা বাড়ানোও জরুরি।’ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার, নির্বাহী পরিচালক মো. খসরু পারভেজ, সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মাসরুর আরেফিন এবং এসএমই ও স্পেশাল প্রোগ্রামস বিভাগের পরিচালক নওশাদ মোস্তফা। উল্লেখ্য, সিএমএসএমই খাতে নারী উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে এই চার দিনব্যাপী মেলার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মেলা চলবে ১১ মে পর্যন্ত। এতে বিভিন্ন জেলা থেকে ৬৮ জন নারী উদ্যোক্তা পণ্য নিয়ে অংশ নিয়েছেন। শেষ দিনে ছয়জন নারী উদ্যোক্তাকে সম্মাননা দেওয়া হবে।